শবেবরাতে আমাদের করনীয় ও বর্জনীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ৮ই এপ্রিল ২০২০ ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন
শবেবরাতে আমাদের করনীয় ও বর্জনীয়

ইসলামী আক্বীদা ও বিশ্বাস মতে বছরের প্রতিটি মাস, সপ্তাহ, দিন, ঘন্টা ও সেকেন্ড মানুষের জন্য কল্যাণকর। কোনো সময়ের ব্যাপারে অকল্যাণ ও অশুভ হওয়ার ধারণা করা ইসলামী আক্বীদা বিরোধী। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, কোনো সময় কিংবা জামানাকে অশুভ ও অকল্যাণকর মনে করা যাবে না। অকল্যাণকর মনে করার অর্থই হলো, আল্লাহ পাক কে অকল্যাণকর মনে করা। বরকত ও মর্যাদার দিক থেকে এ ধরণের শ্রেষ্ঠত্বের কথা কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে উম্মতকে জানানো হয়েছে। যে সকল রাত্রে মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশেষত্বের কথা কুরআন শরীফে এসেছে, 

তা হলো- শবে মেরাজ, শবে বরাত, শবে কদর ও দুই ঈদের রাত্রি।শবে বরাতকে হাদিসের ভাষায় লাইলাতুল বারাত ও সাধারণ মুসলমানদের মাঝে শবে বরাত নামে প্রসিদ্ধ।আরবী ভাষায় বরাত অর্থ নাজাত ও মুক্তি। আর এই রাতটি এমন, যার মধ্যে আল্লাহ পাক অগণিত/অসংখ্য মানুষের গুনাহ খাতা ক্ষমা করে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি দান করেন। এ জন্য রাত্রটির নামকরণ করা হয়েছে লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত।তা ছাড়া এ রাত্রিতেে মানুষের প্রয়োজনীয় এক বৎসরের বিষয়াদীর ফয়সালা করা হয়। আর এ রাতটি শা’বানের পনেরতম রাত যা চৌদ্দ তারিখ সূর্য্যাস্ত যাওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত বাকি থাকে। এ রাতটি ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযাহর ন্যায় খুশি উদযাপনের রাত নয়।

ইসলামী শরীয়তে এর পর্যায় এতটুকুই যে, এটা একটি মোবারক ও বরকতপূর্ণ রজনী। এ রাতে রাসূলুল (সা.) অন্যান্য রাতের তুলনায় অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকতেন। মৃত: ব্যক্তিদের ইসালে সাওয়াবের জন্য কবরস্থানে তাশরীফ নিয়ে যেতেন। আর এর পরের দিন রোযা রাখতেন। শবে বরাত পালনের মূল পদ্ধতি এইযে, এ রজনীতে বেশী বেশী ইবাদত-বন্দেগী করবে। 

স্বীয় গুনাহ খাতার জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং কবরস্থানে গিয়ে সুন্নাত ত্বরীক্বানুযায়ী নিজের মাতা-পিতা, আত্মীয় স্বজন এবং সকল মুসলমান নর-নারীর জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আর পরের দিন রোযা রাখবে। (তবে এসকল কাজকে অতি জরুরী মনে করা যাবেনা। এটি যার যার ব্যক্তিগত তাকওয়ার ব্যাপার। আর দল বেঁধে কবরস্থানে যাবেনা বা একে জরুরী মনে করবেনা)হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ)থেকে বর্ণিত,রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন- আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে(শবে বরাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন।এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে মাফ করে দেন।


আসুন জেনে নেই এই রাতে কি করবো আর কি করবোনা।

এই রাতে করনীয়ঃ
১) এই রাতে আল্লাহর রাসুল (সঃ) অনেক দীর্ঘ সময়  নামাজ পড়তেন।
২) পরের দিন রোজা রাখতেন।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন -যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে- তোমরা সেই রাত ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং পরের দিন রোজা রাখো।
৩) এই রাতে পুরুষদের জন্য কবরস্থানে যাওয়া এবং তাদের মৃত আত্মীয় স্বজনদের জন্য ইসালে সাওয়াব করা মুস্তাহাব।
এই সম্পর্কে মুফতী শফি (রহঃ)অভিমত ব্যক্ত করেছেন।তিনি বলেন
রাসুল (সাঃ) যেহেতু জীবনে একবার মাত্র শবে বরাতের রাত্রে কবরস্থানে গিয়েছেন,কাজেই জীবনে একবার এই রাতে কবরস্থানে গেলেই মুস্তাহাব আদায় হয়ে যাবে।এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল কোন ভাবেই যাতে বিদআতি কোন কাজ নাহয়ে যায়।
এই রাতে খুব দোয়া করা।কেননা আল্লাহর রাসুল (সাঃ)বলেছেনঃ শাবানের ১৫ তারিখ রাতে আল্লাহর পক্ষ হতে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন,-আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী,যাকে আমি ক্ষমা করবো। এমনিভাবে সকল বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়।এই রাতে নির্দিষ্ট কোন নামাজ নেই।যত নফল নামাজ পড়া যারা,তবে যাদের কাজা নামাজ বাকি আছে তাদের জন্য উত্তম হবে কাজা নামাজ গুলো আদায় করে নেয়া।
কারন হাশরের মাঠে নফলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেনা,ফরজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
৪)যেহেতু বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ভয়ংকর মহামারী আকার ধারণ করেছে, তাই এহেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের জন্য এই বিশেষ রজনীতে তাওবা ইস্তেগফার ও সংশ্লিষ্ট দোয়াগুলোর উপর অতিমাত্রায় আমল করা।

এই রাতের বর্জনীয় আমল সমুহঃ

১) করোনার এই প্রাদুর্ভাবে  আবেগী হয়ে মসজিদে কিংবা মাঠে জড়োসড়ো হওয়া থেকে বিরত থাকুন,একাকী নিজ বাসায় আমল করুন, নফল এবাদতগুলো বাসায় করাই উত্তম,কারন সম্মিলিত হওয়ার ক্ষেত্রে আমলের চাইতে ফেতনা হওয়ার আশংকাই বেশি।
২) আতশবাজি করা যাবেনা।
৩) হালুয়া রুটি বিতরন করা বা নিজ ঘরে তৈরি করা যাবেনা।
কারণ এতে অহেতুক সময় নষ্ট হয়, এবং বর্তমানে এটা একটা বড় ধরনের ফেতনার আকার ধারন করেছে।
৪) আলোকসজ্জা করা যাবেনা।
৫) মাইকে কুরআন তেলাওয়াত বা হামদ নাত পরিবেশন করে অন্যের আমলে ব্যাঘাত ঘটানো যাবেনা।
৬) কবরস্থানে ভিড় করা বা মেলা বসানো যাবেনা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে এই রাতের সকল ফজিলত দান করুন, আমীন।

ইনিউজ ৭১/ জি.হা