মার্কিন রণতরী রুজভেল্টে ১০০ নাবিক অাক্রান্ত!!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ৫ই এপ্রিল ২০২০ ০৬:০৮ অপরাহ্ন
মার্কিন রণতরী রুজভেল্টে ১০০ নাবিক অাক্রান্ত!!

৪ হাজারের অধিক সেনা করোনা অাক্রান্তের অাশংকায় চিকিৎসার অাবেদন করেছে নৌ ক্যাপ্টেন।মিডিয়ায় এখন শুধু করোনার খবর। কে কে ভ্যাকসিন বানাচ্ছে, কতোদিন পর ভ্যাকসিন আসতে পারে, লকডাউন কতোদিন চলবে, মোট কতো মানুষ আক্রান্ত হতে পারে, মারা যেতে পারে কতো জন – একটু পর পর আপডেইট। ৭০০ কোটি মানুষের বিশাল একটা অংশের চিন্তা এখন দখল করে আছে করোনা। পুরো পৃথিবীর মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন এই অদেখা ভাইরাস।অন্য একটা বাস্তবতা কথা বলি। এক  হিসেব অনুযায়ী ২০০১ থেকে

২০১৮ পর্যন্ত অ্যামেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো বাহিনীর হামলায় মারা গেছে প্রায় ৫ লক্ষ মুসলিম। গড়ে প্রতি বছর মারা গেছে ২৭,০০০ মুসলিম। প্রতিদিন ৭৬ জন করে।আরেক হিসেব অনুযায়ী শুধু ২০০১-২০১১ পর্যন্ত দশ বছরে ন্যাটো জোট হত্যা করেছে ১৩ লক্ষ মুসলিমকে। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে খুন করা হয়েছে ১,৩০,০০০ হাজার মুসলিমকে। প্রতিদিন মারা গেছে গড়ে ৩৫৬ জন মুসলিম। ব্যাপারটা একটু চিন্তা করুন। পশ্চিমে মানুষ মারা যাচ্ছে আজ কয়েক সপ্তাহ ধরে। আর এই পুরোটা সময় নাওয়া খাওয়া ছেড়ে মিডিয়া এই একটা বিষয় নিয়ে

পড়ে আছে। অন্যদিকে মুসলিমরা এইভাবে মারা যাচ্ছে এই ২০ বছর ধরে। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানের মতো জায়গাগুলোতে দিনে দিনে শত শত করে মুসলিম মারা গেছে। মিডিয়া সেই খবরগুলো কিভাবে উপস্থাপন করেছে? কখনো পত্রিকার ভেতরে আন্তর্জাতিক পাতায়, ছোট্ট কলামে। কখনো আধা মিনিটের সাউন্ড বাইটে। আর বেশিরভাগ সময় বেমালুম চেপে গেছে। যেন মুসলিম মারা যাওয়াটা বিশেষ কোন ঘটনা না। স্বাভাবিক ব্যাপার। যেন এতে চিন্তিত হবার কিছু নেই। উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। এটাই রুটিন।

 
মিডিয়ার চতুর মেসেজিং আমাদের মনকেও প্রভাবিত করেছে। অবচেতনভাবে আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি মুসলিমদের রক্ত সস্তা। আর এভাবে একসময় বদলে গেছে আমাদের পুরো চিন্তাভাবনা। উলটে গেছে হিসেবনিকেশ। নিজের অজান্তেই আমরা ধরে নিয়েছি মুসলিমদের হত্যা করা হবে, আমাদের মা-বোন-স্ত্রী-কন্যারা ধর্ষিত হবে, আমাদের সন্তানরা পঙ্গু হবে, অনাথ হবে, নিহত হবে—এটাই স্বাভাবিক। কাফির মরলে সেটা অস্বাভাবিক। মুসলিম মার খাবে, এটা স্বাভাবিক। মুসলিম প্রতিরোধ করলে, পালটা আঘাত করলে, সেটা অস্বাভাবিক।আজ সারা পৃথিবী 


পাগল হয়ে গেছে। সবাই বেপরোয়া হয়ে চিন্তা করছে কিভাবে এই মৃত্যুর মিছিল থামানো যায়। যারা থামানোর চেষ্টা করছে তারা সবার কাছে হিরো। এটাই স্বাভাবিক। এটা মানুষের সহজাত প্রতিক্রিয়া। কিন্তু বিশ বছর ধরে চলা জেনোসাইডের সময় যারা মুসলিম হত্যা বন্ধ করার কথা চিন্তা করেছে, চেষ্টা করেছে বিশ্ব মিডিয়া তাদের কিভাবে উপস্থাপন করেছে? মিডিয়ার কথা বাদ দেই, এই আমরা আমরা তাঁদেরকে কিভাবে ট্রিট করেছি? রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনায় মারা যাওয়া ডাক্তার কিংবা নার্স হল হিরো। আর নির্যাতিত মুসলিমদের পাশে দাড়ানোর জন্য দুনিয়ার


 সব কিছু ছেড়ে দিয়ে, সবার চোখে অচ্ছুৎ হয়ে হাসি মুখে যারা নিজেদের জীবন দেয়া তাঁরা কী? মিডিয়া তাঁদের কী বলে? আমরা তাঁদেরকে কী বলি?আজ তো অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে চিন্তা করাটাকে অ্যামেরিকা আর তার গোলামি করা সরকারগুলো ‘র‍্যাডিক্যালিযম’ বলে। আর অ্যামেরিকার আদর্শিক গোলামি করা কিছু মুসলিম কোলাবরেটর (না বুঝলে “রাজাকার” পড়ুন) বলে ‘কৃত্রিম গ্লানিবোধ’। দ্বীন বেচে দিন কাটানো লোকেরা আমাদের শিখায় এসব নিয়ে চিন্তা না করতে। এগুলো নিয়ে আমাদের মাথাব্যাথার কিছু নেই। আমরা আমাদের মতো থাকি। শান্তশিষ্ট, ছাপোষা, সন্তুষ্ট। অথচ আমাদের কী করা উচিৎ ছিল? আমাদের দায়িত্ব কী ছিল? 

আল্লাহ্‌ তা'লা কি বলেননি? 
وَإِنَّ هَـٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ
তোমাদের এসব উম্মাত তো একই উম্মাত (যারা একই দ্বীনের অনুসরণ করে), আর আমিই তোমাদের প্রতিপালক, কাজেই আমাকেই ভয় করো। [তরজমা, সূরা আল-মু’মিনুন, ৫২]


নবী ﷺ কি বলেননি, 
ما من امرئٍ مُسلمٍ يخذُلُ امرأً مسلمًا في موضعٍ تُنتَهكُ فيه حرمتُه، ويُنتقَصُ فيه من عِرضِه إلّا خذله اللهُ في موطنٍ يُحِبُّ فيه نُصرتَه
যে মুসলিম অপর কোনো মুসলিমের সম্মানহানি করা হলে কিংবা মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করা হলে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে না, আল্লাহও তাকে এমন জায়গায় সাহায্য করবেন না, যেখানে সে আল্লাহর সাহায্য চায়। [সুনান আবু দাউদ, ৪৮৮৪; মুসনাদ আহমাদ, ১৬৩৬৮] যে অবহেলা, যে নির্মম উদাসীনতা আমরা দেখিয়েছি। মুসলিম রক্তের ব্যাপারে যে তাচ্ছিল্য আমরা করেছি।

যেভাবে আমরা অ্যামেরিকার সুরে কথা বলেছি, তাদের বানানো স্ক্রিপ্টে অভিনয় করে গেছি - তাঁর বদলে আমাদের আসলে কী প্রাপ্য? যদি যার্‌রা যার্‌রা পরিমাণ হিসেব বুঝিয়ে দেয়া হয় তাহলে আমাদের ভাগে আসলে কী জোটে? কোন দিক দিয়ে আমরা শাস্তি আর ক্রোধের উপযুক্ত নই?প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবি। রাত জেগে।উত্তর মেলে না, হিসেব মেলে না তারপর রক্তের ডাক উপেক্ষা করে আবার মগ্ন হই উপেক্ষার অবসাদে।পাশ ফিরে ডুবে যাই নিঃস্পন্দ নিরাপরাধ ঘুমে। আমি যে শান্তশিষ্ট...ছাপোষা, সন্তুষ্ট......!!!