কারাগারে হচ্ছে না ঈদ জামাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ২৫শে মে ২০২০ ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
কারাগারে হচ্ছে না ঈদ জামাত

মিলনের বার্তা নিয়ে আবার এসছে ঈদুল ফিতর। সবার মতো কারাগারে বন্দিরাও ঈদ পালন করবেন। তবে অন্যবারের তুলনায় এবারের ঈদটা হবে ব্যতিক্রম। দেশের কোনও কারাগারেই এবার উন্মুক্তস্থানে ঈদের জামাত হচ্ছে না। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে এবার কোনও স্বজনও চাইলে বন্দির দেখা পাবেন না।

কারা অধিদপ্তরের হিসাব মতে সারাদেশে ৭৫ হাজার ৬১৭ জন বন্দি রয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ বন্দি ৭২ হাজার ৬৩৯ জন আর মহিলা বন্দি দুই হাজার ৯৭৮ জন। মোট হাজতি রয়েছে ৬০ হাজার ৯৯৫ জন। এদের মধ্যে পুরুষ বন্দি ৫৮ হাজার ৫৭৪ জন আর মহিলা বন্দি দুই হাজার ৪২১ জন। কয়েদি রয়েছেন ১২ হাজার ৬৩১ জন। এদের মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ১২ হাজার ১২৬ জন আর মহিলা রয়েছেন ৫০৫ জন।

সারাদেশে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছেন এক হাজার ৮৯৮ জন। এদর মধ্যে পুরুষ রয়েছে এক হাজার ৮৫০ জন আর মহিলা ৪৮ জন। বিদেশি বন্দি রয়েছে ৫৬২ জন। এদের মধ্যে হাজতি ৪১২ জন। তার মধ্যে পুরুষ ৩৯৮ জন আর মহিলা ১৪ জন। কয়েদি ৫৭ জন।

এছাড়া আরপি বন্দি রয়েছে ৯৩ জন। পুরুষ ৮৯ জন আর মহিলা চারজন। মায়ের সাথে শিশু রয়েছে ৩৬৭ জন। এদের মধ্যে ছেলে ১৬৫ জন আর মেয়ে ২০২ জন। সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য ৭৮৯ জন। জঙ্গি রয়েছেন ৭৮২ জন। এর মধ্যে জেএমবি ৫০০ জন এবং অন্যান্য ২৮২ জন।ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দিদের জন্য উন্মুক্তস্থানে কোনও নামাজের ব্যবস্থা নেই। তবে বন্দিরা চাইলে সামাজিক দুরুত্ব মেনে নিজেদের সেলের মধ্যে নামাজ পড়তে পারবেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রায় আট হাজার সাতশ জন বন্দি রয়েছেন। তাদেরকে সকাল বেলায় সেমাই আর মুড়ি নাস্তা খেতে দেওয়া হবে। দুপুরে তারা খাবার পাবেন পোলাও, গরু বা খাশির মাংস, সালাদ, একটি করে মিষ্টি পান সুপারি, রাতে তারা খাবার পাবেন সাদাভাতা, রুই মাছ, আলুরদম।

এব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহবুবুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ঈদের জন্য কোন জামায়াত হবে না। অন্যবারের মত এবারও কোন বন্দির সাথে তাদের স্বজনেরা দেখা-স্বাক্ষাত করতে পারবেন না।’

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে তিন হাজারের মত বন্দি রয়েছেন। এবার ঈদের দিন সকালে তারা পায়েস আর মুড়ি খাবেন। আর দুপুরে সাদা ভাত মাছের মুড়িঘন্ট ও মাছ ভাজা এবং রাতের বেলায় পোলাও গুরুর মাংস বা খাশির মাংস, একটি ডিম, খাশির মাংস বুটের ডালের তরকারি, একটি মিস্টি এবং কোল্ড ড্রিংক্স পাবেন।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে জেলার দেব দুলাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এবারের ঈদের দিন আমাদের কারাগারে উন্মুক্তস্থানে কোন জামায়াতের ব্যবস্থা থাকছে না। তবে বন্দিরা চাইলে নিজেদের সেলের মধ্যে সামাজিক দুরুত্ব মেনে নামাজ পড়তে পারবেন।’

এব্যাপারে জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মুহাম্মদ মনজুর হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের ঈদের জামাত সাধারণত কারাগারের ভেতরে খোলা জায়গায় এবং বাইরে কারা মসজিদগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়। বাইরে কারারক্ষী এবং স্টাফদের জন্য ঈদের জামাত হয়। আর ভেতরে বন্দিদের জন্য ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।’

তিনি বলেন, ‘বাইরের কারা মসজিদগুলোতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তা মেনে। প্রয়োজনে এক ঘণ্টার ব্যবধানে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হবে। আর ভেতরের বন্দিদের যে জামাতটা খোলা জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়, সেটা এবার হবে না। বন্দিরা নিজেদের সেলের মধ্যেই নিজেরা ঈদের নামাজ পড়ে নেবে। ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি ও হ্যান্ডশেক না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

মনজুর হোসেন জানান, করোনার কারণে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ আগে থেকেই বন্ধ আছে। ঈদ উপলক্ষে এমনিতেই দেখা-সাক্ষাতের চাপ বেড়ে যায়। সেকারণে এবার ঈদ উপলক্ষে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ থাকবে। ইতোমধ্যে দেশের সব কারাগারে এই বিষয়ে নোটিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রতিবছর স্বজনদের কাছ থেকে বন্দিদের জন্য যে খাবার পাঠানো হয়, সেটা দেওয়া বন্ধ থাকবে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়টি চিন্তা করে। ঈদের দিন কারাগারের পক্ষ থেকে উন্নত খাবার দেওয়া হয়। সেজন্য ওইদিন স্বজনদের পক্ষ থেকে খাবার না দিলেও চলবে।

তিনি বলেন, ‘এবার ঈদের পরের দিনও বন্দিদের ভালো ও উন্নত মানের খাবার সরবরাহ করা হবে। আর যারা কারাগারের বাইরে হাসপাতালগুলোর প্রিজন সেলে আছেন, তাদের খাবার সরবরাহ করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’তিনি আরও বলেন, ‘সকালে মুড়ির সঙ্গে পায়েস অথবা সেমাই দেওয়া হবে। ছোট কারাগার হলে দুপুরে পোলাও, গরু ও খাসির মাংস দেওয়া হয়। বড় কারাগার হলে এই খাবার বিকালে দেওয়া হয়। আর রাতের খাবার হিসেবে সাদা ভাতের সঙ্গে আলুর দম ও মাছ দেওয়া হবে।’

ইনিউজ ৭১/ জি.হা