রাজধানীতে ঢুকেছে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৫৭ অপরাহ্ন
রাজধানীতে ঢুকেছে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ

রাজধানীতে প্রবেশ করেছে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ। অতিরিক্ত সেবনে মৃত্যু অপরিহার্য—তার পরও তরুণরা এর দিকে ঝুঁকছে। আগে থেকে ইয়াবায় আসক্ত মাদকসেবীদের মধ্যে ক্রিস্টাল মেথ (আইস ও গ্লাস নামেও পরিচিত) গ্রহণের প্রবণতা বেশি। মাদক কারবারিরা বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করছে এ দামি মাদকটি—এ তথ্য জানিয়েছে সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ক্রিস্টাল মেথসহ গ্রেফতার শফিকুল ইসলাম।এ নিয়ে গত এক বছরে রাজধানীতে ক্রিস্টাল মেথের তিনটি চালান জব্দ হলো। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও বলেছেন, মাদকটির বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে। তারা বলেছেন, প্রায়ই তাদের কাছে খবর আসছে—নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে ক্রিস্টাল মেথ।

মূলত ক্রিস্টাল মেথামফেটামাইনের সংক্ষিপ্ত নাম ক্রিস্টাল মেথ। এটি দেখতে স্বচ্ছ পাথরের মতো। রং নীলাভ সাদা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের সজাগ ও উদ্দীপ্ত রাখতে মেথ ব্যবহারের কথা শোনা গেছে। চিকিত্সকরা স্থূলতা দূর করতে ও অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডারের (এডিএইচডি) চিকিত্সায় সীমিত ক্ষেত্রে মেথামফেটামাইন ব্যবহার করেন উন্নত বিশ্বে।জানা গেছে, ক্রিস্টাল মেথ সেবনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা অত্যন্ত দ্রুত বেড়ে যায়, এ অবস্থায় অনেকের মৃত্যুও হয়। এটি মানুষের শরীরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার এটি দীর্ঘমেয়াদি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা তৈরি করে। যেমন : স্মৃতিভ্রংশ, উদ্বিগ্ন ও দ্বিধান্বিত করে। নিদ্রাহীনতা ও মানুষকে শেষে হিংস্র করে তোলে।

মাদক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি মাদকের প্রথম চালানটি মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ধরা পড়ে। মাত্র ৮ গ্রাম ছিল ঐ চালান। এর সূত্র ধরে ঝিকাতলার ৭/এ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাসার বেজমেন্টে আইস পিল তৈরির একটি ল্যাব পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ল্যাব মালিক হাসিবসহ তিন জন গ্রেফতার হন। তখনই ভয়াবহ এ মাদকের বিষয়টি সবার গোচরে আসে। সে সময় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, অন্যান্য মাদক দুর্লভ হয়ে যাওয়ায় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীরা এসব মাদকের দিকে ঝুঁকছে।

অভিযান পরিচালনাকারী মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খুরশিদ আলম জানিয়েছিলেন, হাসিবই দেশে প্রথম আইস তৈরি ও বাজারজাত করেছে। এর চার মাসের মধ্যে খিলক্ষেত এলাকায় ক্রিস্টাল মেথসহ গ্রেফতার হন এক নাইজেরীয় নাগরিক। এ সময় তার কাছে মেলে ৫০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ। পরে ভাটারা এলাকার আরেকটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় ৪৭২ গ্রাম আইস। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নাইজেরীয় নাগরিক আজাহ অ্যানাওচুকওয়া ওনিয়ানুসি জানিয়েছিল, উগান্ডা থেকে আইসের চালানটি ডিএইচএল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় আসে। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তিনি শিক্ষার্থী ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। গত দুই বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তিনি আইসের ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে গ্রেফতার হন শফিকুল ইসলাম, তার কাছে মেলে ৫৫ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ।

এ ব্যাপারে অভিযান পরিচালনাকারী মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো, দক্ষিণ বিভাগ) সহকারী পরিচালক রাজিব মিনা বলেন, শফিকুল ইসলাম জানিয়েছে, ক্রিস্টাল মেথের চালানটি সে ভারত থেকে এনেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো, দক্ষিণ) অতিরিক্ত পরিচালক মানজারুল ইসলাম বলেন, শফিকুল ইসলামকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। ইয়াবার মতো ক্রিস্টাল মেথ বহন সহজ। তাছাড়া ইয়াবা চালান আগের মতো স্বাভাবিক না থাকার কারণেই মাদকসেবীরা ক্রিস্টাল মেথের দিকে ঝুঁকছে।মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো, উত্তর) সহকারী পরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, ইয়াবার চেয়েও দাম বেশি আইসের এবং অনেক গুণ ক্ষতিকর মাদক। একবার আইস সেবন শুরু করলে এ মাদকের নির্ভরতা চলে আসে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় এক গ্রাম ক্রিস্টাল মেথের দাম ৭ হাজার রিংগিত। বাংলাদেশে এ মাদকের বাজার ধরার জন্য তা কম দামে অর্থাত্ প্রতি গ্রাম ৭ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল। সহকারী পরিচালক খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, যাদের ধরা হয়েছে তারা স্বীকার করেছে যে প্রতি গ্রাম আইস তারা ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করত। উল্লেখ্য, ইয়াবার আগ্রাসন রুখতে ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। অভিযানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রায় ৪০০ মাদক কারবারি নিহত হয়।