চীন থেকে আনা হচ্ছে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ১ লাখ কিট
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবরই দাবি করে আসছে তাদের কাছে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ কিট রয়েছে। কিন্তু সন্দেহজনক রোগীদের পরীক্ষার জন্য কী পরিমাণ কিট মজুত আছে, তার নির্দিষ্ট সংখ্যা সবসময় এড়িয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতর। অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি থেকে দাবি করা হয়েছে, চীন থেকে ১ লাখ পরীক্ষার কিট আসছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ড. নাসিমা সুলতানা জানান, তারা আশা করছেন আগামী শুক্রবারের মধ্যে চীন থেকে কিটগুলো চলে আসবে এবং হাতে পেয়ে যাবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিটের কোনও স্বল্পতা নেই। সন্দেহভাজন রোগীদের কিট দিয়ে পরীক্ষার জন্য আমাদের উপযুক্ত সরঞ্জাম রয়েছে।
নাসিমা সুলতানা জানান, কিটের সংখ্যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে বলে মজুতের নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা যাচ্ছে না।
৩১ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছিল ৯২ হাজার পিসিআর টেস্ট কিট সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ২১ হাজার কিট বিভিন্ন ল্যাবে বিতরণ করেছে এবং মজুত রাখা হয় ৭১ হাজার। এরপর থেকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক বুলেটিনে পরীক্ষার কিটের বিষয়ে তথ্য প্রদান বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ড. নাসিমা সুলতানা বলেন, কোনও মানুষের একাধিকবার পরীক্ষার প্রয়োজন হয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য। আমরা পরীক্ষার কিট আমদানিও করছি। ফলে কিটের সংখ্যা কখনোই স্থির থাকবে না।
তিনি জানান, এই কারণে মজুতে থাকা কিটের নির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে পারবেন না।
কোন জেলায় সবচেয়ে বেশি কিটের প্রয়োজন জানতে চাইলে নাসিমা সুলতানা জানান, প্রত্যেক ল্যাবের নিজস্ব চাহিদা রয়েছে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ল্যাবের প্রয়োজন অনুসারে কিট বিতরণ করছে। তিনি বলেন, দেশে ২১টি ল্যাব রয়েছে এবং এর মধ্যে ঢাকাতে ১০টি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ঢাকার ল্যাবগুলো থেকেই চাহিদা বেশি আসছে।
span style="font-size:large;">আজ শনিবার অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা ১৪০ জন। একদিনে নতুন করে আরও করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৩০৯ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় মোট শনাক্ত হলেন চার হাজার ৯৯৮ জন। গত একদিনে যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে পাঁচ জন নারী এবং চার জন পুরুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৪২২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, আর পরীক্ষা করা হয়েছে তিন হাজার ৩৩৭টি নমুনা।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, প্রতি ১০ লাখে ২৫ হাজার পরীক্ষা করা উচিত, যাতে করে মহামারিতে দেশের সত্যিকার পরিস্থিতি জানা যাবে। বাংলাদেশে পরীক্ষার কিট সংখ্যা জনগণের জানা উচিত। কারণ অসম্পূর্ণ তথ্য এই সংকটের সময়ে কাউকে সহযোগিতা করে না।
জাফরুল্লাহ বলছেন, মজুত কিটের সংখ্যা জানা থাকলে আগামী দিনগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদফতর কতটি পরীক্ষা করতে পারবে, তা জানা সম্ভব হবে।
কীভাবে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করবেন?
কেউ যদি কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে চান তাহলে নমুনা সংগ্রহের জন্য তিনটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন। প্রথমত, স্বাস্থ্য বাতায়ন বা হান্টিং নম্বর অথবা স্বাস্থ্য অধিদফতরে (৩৩৩, ১৬২৬৩ বা ০১৯৪৪৩৩৩২২২) ফোন করবেন। সম্প্রতি স্থাপিত ল্যাবের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নমুনা সংগ্রহের জন্য বলা হবে।
দ্বিতীয়ত, সন্দেহভাজন রোগী সরাসরি পরীক্ষার সুযোগ আছে এমন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে পারেন।
তৃতীয়ত, যে কেউ চাইলে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তিনিই নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করবেন।
কোথায় কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা যাবে?
সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য বাংলাদেশে করোনার পরীক্ষা করা খুব সহজ ছিল না। ৮ মার্চ প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর পরীক্ষার সংখ্যা সীমিত রাখায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তবে ৮ মার্চের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২১টি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকায় ১১টি এবং বিভিন্ন জেলায় ১১টি ল্যাবে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এসব পরীক্ষা কেন্দ্র হচ্ছে:
ঢাকা
জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)
ঢাকা শিশু হাসপাতাল
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ
ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ (আইদেশি)
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ
আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি (শুধু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য)
বিভিন্ন জেলা
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিসেস, চট্টগ্রাম
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ
সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল
কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ
ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ, বগুড়া
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।