মূর্তি না ভাস্কর্য !

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডাক্তার আরিফুর রহমান, বিশিষ্ট ইসলামি গবেষক
প্রকাশিত: বুধবার ২রা ডিসেম্বর ২০২০ ১২:২৯ অপরাহ্ন
মূর্তি না ভাস্কর্য !

মূর্তি না ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক চলছে বেশ কিছু দিন ধরে বাংলাদেশে। এ নিয়ে বেশ আলোচনা করেছনে ডাক্তার আরিফুর রাহমান। ইনিউজ৭১ এর দর্শকদের জন্য আমরা হুবহু তুলে ধরলাম। মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, "মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়। মূূর্তি বা প্রতিমা তৈরি হয় উপাসনার জন্য আর ভাস্কর্য সৌন্দর্যের অংশ।খুব সুন্দর কথা বলেছেন তিনি। বাংলা ভাষায় ভাস্কর্য আর মূর্তি বলতে আমরাও বুঝি দুটো জিনিষ এক নয়।

কিন্তু কোন ভাস্কর যখন তার শিল্পকর্মটিতে কোন দেবদেবী বা মানুষের চেহারা বানিয়ে ফেলেন তখন আমরা সাধারণভাবে সেটিকে চেহারা অনুযায়ী মা' দুর্গা, মা' কালী, গনেশ অথবা মানুষ হলে বলি--নেতাজির আবক্ষ মূর্তি, বা গান্ধীজির মূর্তি ইত্যাদি। পূজার মূর্তি ছাড়া কিছু মানুষের মূর্তিকে আমরা শৈল্পিক দৃষ্টিতে সুন্দর ভাস্কর্যও বলি যেমন মাইকেল এঞ্জেলোর বা বেনইনোর শিল্পকর্ম। একই শিল্পকর্ম যখন আবার কোন পরিচিত মানুষের অবয়ব হয়ে যায় সেটি আবার অমুকের মূর্তি বলেও পরিচিতি পায়। এটুকু আলোচনায় তাহলে বোঝা যাচ্ছে মূর্তি আর ভাস্কর্য শাব্দিক ভাবে এক না হলেও বৈষয়িক ভাবে একই ঘরানার হয়ে যায় মূর্তির ক্ষেত্রে। 

মুসলিম প্রধান দেশে যেহেতু মূর্তি শব্দটি নিয়ে এক ধরনের সংবেদনশীলতা আছে তাই মূর্তিকে মূর্তি না বলে ভাস্কর্য বলা হচ্ছে, এটি একদলের অনুযোগ। এই কথার জবাবে ভাস্কর্য দল বলছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবে শুনে স্বাধীনতার শত্রুদের মাথা গরম হয়ে গেছে, তাঁরা এটিকে মূর্তি বলে ঠেকাতে চাইছে। এই রাজনৈতিক ইস্যুটিতে জটিলতা থাকতে পারে, গরম ঠান্ডা ব্যাপার থাকতে পারে, এগুলি নেতারা ম্যানেজ করুক বা তারা ঝগড়া করুক, আমরা শুধু একাডেমিক আলোচনার বিষয়টিতে থাকি।"ভাস্কর্য আর মূর্তি এক নয়" পক্ষের একজন অধ্যাপক মুরব্বি সূরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে বলেন, 'সুলেমান নবী ভাস্কর্য বানাতেন।' তাই কোরানে ভাস্কর্যের অনুমতি আছে। ( নাউযুবিল্লাহ)। সম্ভবতঃ বাংলা অনুবাদের দিকে তাকিয়ে তিনি একথা বলেছেন, মূল কোরানে না যেয়ে।    

কোরআনুল করীমের এই আয়াতটির বাংলা তরজমা হচ্ছে"তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউয সদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত।" আরবী ভাষায় ভাস্কর্যকে বলে হয় نحت নহত। মনুমেন্ট এর আরবী হচ্ছে نصب নসব। কিন্তু কোরআনুল করীমে সুলেমান নবীর ভাস্কর্যকে বলা হয়েছে "তামা-ছীলা" যার অর্থ প্রাণহীন বস্তুর ভাস্কর্য, মছল শব্দ উদ্ভূত তামা-ছিলা শব্দকে আধুনিক দুএকজন আরবী লেখক মূর্তি অর্থে ব্যবহার করেছেন, যেমন আমেরিকার স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে "তামা-ছিলা হুর্রিয়া"-- মুক্তির মনুমেন্ট বলে অনুবাদ করেছেন। কিন্তু ইসলামী পন্ডিতগন বাঁধ সেধেছেন এই বলে যে, আল্লাহর কোরানের এই আয়াতে করিমে "ইয়া‘মালূনা লাহু মা-ইয়াশাউ মিম মাহা-রীবা ওয়া তামা-ছীলা ওয়া জিফা-নিন।" তামা-ছিলা বলতে প্রাণহীন যেকোন জিনিষের ভাস্কর্য বা কারুকাজময় কাজকে বুঝিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। 

আল্লাহ সুলেমান নবীর রাজ্যের প্রাসাদগুলির সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যে আফ্রিত জাতীয় জিন রাজ মিস্ত্রীদের দিয়ে কারুকার্য করানোর কথা বলেছেন, কিন্তু সেই কারুকার্যে বা ভাস্কর্যে বা কোরআনের শব্দ 'তামা-ছিলাতে' কোন প্রাণীর ত্রিমাত্রিক খোদাই করা অবয়বের কথা ছিলোনা। জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদের পেছনে সুলেমান নবীর মুসেলিয়াম, এখন এটি মেয়েদের স্কুল, এবং দাউদ (আ) এর সম্পৃক্ত প্রত্নতাত্বিক বিল্ডিংগুলির কোনটিতে মিশরের পিরামিডের মতো কোন প্রাণীর ভাস্কর্য নেই, মানুষের তো নয়ই। যীশুর যে ভাস্কর্য ও চিত্র পাওয়া যায় ওই এলাকায় সেগুলি রোমানদের ও রোমপরর্বর্তী শাসকদের বানানো। 

তাই কোরানে বর্ণিত সুলেমান নবীর "তামা-ছিল" শব্দটি কোনো ভাবেই কোন প্রাণীর ভাস্কর্য নয়, কোনো ভাবেই তা কোন ধরনের মূর্তিও নয়।এর পরেও যদি কারো ভাবনায় আসে, এত পুরোনো সুলেমান নবীর (আ) কাহিনী, ভাস্কর্যের মধ্যে দু একটা মূর্তি থাকতেও তো পারে। না স্যার, সেটি হবার কোন সম্ভাবনা নেই, কারণ একটা মূর্তি বা একটি মানুষের চিত্র থাকলে তথ্যটি কোরআনুল করীম ও হাদিসের কথাগুলির বিপরীত হয়ে যেতো, আল্লাহ নিশ্চয়ই বিপরীতমুখী কথা বলেন নাই কখনো। 

এই কথার দলিল কি? 

দলীল হছে কোরআনের অনেক আয়াত, ও বেশ কয়েকটি হাদিস। 

১) প্রথমটি হচ্ছে সূরা হজ্জ এর ৩০ নম্বর আয়াত, "তোমরা পরিহার করো (‘রিজস’) অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তি সমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’  ‘রিজ্স’ অর্থ নোংরা ও অপবিত্র বস্তু। 

২) সূরা নূহ ২৩ নম্বর আয়াতে কাফেরদের নিয়ে বলা হয়েছে ‘এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে।’ 

উল্লেখিত ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসর কয়েকটি মূর্তির নাম যেগুলোকে ভাস্কর্য হিসাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। আল্লাহর বর্ণিত এই মূর্তিগুলো সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা) বলেন, "এগুলো হচ্ছে নূহ (আ)এর সম্প্রদায়ের কিছু পুণ্যবান লোকের নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ করেছে তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে এই কুমন্ত্রণা দিয়েছিল যে, তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে তাঁদের মূর্তি স্থাপন করা হোক এবং তাদের নামে সেগুলোকে নামকরণ করা হোক। লোকেরা এমনই করেছিল। ওই প্রজন্ম যদিও এই সব ভাস্কর্যের পূজা করেনি কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃত বিষয় অস্পষ্ট হয়ে গেল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূজায় লিপ্ত হলো। --সহীহ বুখারী হাদীস নম্বর ৪৯২০। 

৩) সূরা ইবরাহীম ৩৬ আয়াতে এসেছে: ‘ইয়া রব, এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে!’

৪) সূরা আনকাবুত ১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা কর (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর ‘মিথ্যা।

এই সব আয়াত পরিষ্কার প্রমান করে যে মূর্তির বিরুদ্ধে এতোগুলি কথা বলে আল্লাহ "তামা-ছিলা" বলতে যে ভাস্কর্য বুঝিয়েছেন সেগুলি কোন মানুষ  বা প্রাণীর মূর্তি বা ভাস্কর্য নয়। তাই অনুবাদকারীগন "তামা-ছিলা'র অর্থ লিখেছেন "প্রাণহীন বস্তুর ভাস্কর্য।"  

ভাস্কর্য শব্দের আড়ালে মূর্তি কথাটি ঢাকতে সেই একই অধ্যাপক মা আয়েশার বাল্যকালের ঘোড়ার মূর্তি নিয়ে খেলার রেফারেন্স দিয়ে মূর্তির বৈধতা দিতে চেয়েছেন। তিনি তথ্য টুইস্ট করেছেন। মা আয়েশা যখন শিশু ছিলেন, তখন একদিন নবী (স) তাঁর বন্ধু আবু বকর(রা) এর বাসায় গিয়ে দেখেন, মা আয়েশা একটি মাটির ঘোড়ার পুতুল নিয়ে খেলছেন। হুজুর (স) জিগ্যেস করলেন কি দিয়ে খেলছো তুমি? মা বলেছিলেন, এটি একটি ঘোড়া এটি উড়তে পারে। নবী(স) শিশু আয়েশার সাথে অবাক হবার ভান করেছিলেন। এই ঘটনা দিয়ে ভাস্কর্য আর মূর্তির বৈধতা দেয়া যায়? তারপরেও ফিকহবিদরা শিশুদের পুতুল নিয়ে খেলার বৈধতা দিয়েছেন, ব্যাস ওই পর্যন্তই। মদ পান করা একসময় নিষিদ্ধ ছিলোনা পরবর্তীতে তা হারাম হয়। কোন ভাবেই মা আয়েশার এই পুতুল খেলা দিয়ে মূর্তির বৈধতা দিতে পারবেন না, স্যার।

এখন দেখি হাদিসে মূর্তি নিয়ে কি পরিষ্কার নির্দেশনা আছে। 

১) মুসনাদে আহমাদ ৬৫৭ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, আলী ইবনে আবী তালেব (রা) বলেন, নবী করীম (সা) একটি জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে মদীনায় যাবে এবং যেখানেই কোনো প্রাণীর মূর্তি পাবে তা ভেঙে ফেলবে, যেখানেই কোনো সমাধিসৌধ পাবে তা ভূমিসাৎ করে দিবে এবং যেখানেই কোনো চিত্র পাবে তা মুছে দিবে?’ আলী (রা) এই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হলেন। এরপর নবী (সা) বলেছেন, ‘যে কেউ পুনরায় উপরোক্ত কোনো কিছু তৈরি করতে প্রবৃত্ত হবে সে মুহাম্মাদের (সা) প্রতি নাজিলকৃত দ্বীনকে অস্বীকারকারী।’ সহীহ মুসলিম  ৯৬৯ নম্বরে একই হাদিস বর্ণিত হয়েছে আবুল হাইয়াজ আসাদীর বরাত দিয়ে। 

২) সহীহ বুখারী ৫৯৫৩ হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা) নবী (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, "ওই লোকের চেয়ে বড় জালেম আর কে যে আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে। তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তবে তারা সৃজন করুক একটি কণা এবং একটি শষ্য কিংবা একটি যব!' কট্টর হাদীসবেত্তারা "সৃষ্টির মতো সৃষ্টি"র ব্যাখ্যায় প্রথমেই চিত্রকর, ভাস্করদের ধরে নিয়েছেন, আল্লাহই  ভালো জানেন এরা কারা।   

৩) সহীহ বুখারী, ৭৫৫৭; ৭৫৫৮ এ বর্ণিত, আয়েশা (রা) ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা) বলেছেন, এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের কিয়ামত দিবসে আযাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদের সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা ‘সৃষ্টি’ করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার করো।" হাদীসবিদদের ধারণায় এরা ভাস্কর ও চিত্রকর। সাম্প্রতিক মূর্তি বনাম ভাস্কর্য বিতর্কে যারা গলা ফাটিয়ে বুড়িগঙ্গায় যেতে চাইছেন তারা কয়েকটি ব্যাপার অনুধাবন করলে এই বিতর্ক শেষ হয়ে যায়।

প্রথমত: বাংলাদেশ কিন্তু ইসলামিক রাষ্ট্র নয়, এটি একটি মুসলিম প্রধান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এদেশে সনাতন ধর্মের মানুষেরা মূর্তি পূজা করে তাদের ধর্ম পালন করেন হাজার হাজার বছর ধরে, এটা নিয়ে কোনোদিন কোনো কিছু হয়নি কারণ ইসলাম ধর্মে অন্য ধর্ম বিশ্বাসকে স্বীকৃতি ও সম্মান দিতে বলা হয়েছে। মুসলমানরা তা পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ভাস্কর শামীম শিকদারের বানানো বঙ্গবন্ধু সহ অন্যান্য জাতীয় নেতা ও মনীষীদের ১০৩ টি ভাস্কর্য বা মূর্তি যাই বলা হোক বহু বছর ধরে অক্ষুন্ন আছে, কেউ আপত্তি জানায়নি। 

বাংলাদেশে সমস্ত অফিসে এবং টাকায় বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে। ইসলামে ছবি তোলা হারাম, তবুও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সৌদি আরবের টাকায়ও রাজাদের ছবি আছে। সেখানেও সব প্রতিষ্ঠানে জাতির পিতা সহ তিনজন রাজার ছবি টাঙানো থাকে, তবে কোথাও কারো ভাস্কর্য নেই। হজ্জে যাওয়ার সময় আমরা হারাম ছবি তুলি। কয়েকজনকে চিনি যারা ছবি তুলতে হবে বলে হজ্জ্বই করেন নি। সৌদি আরব সহ পৃথিবীর সব কাপড়ের দোকানে প্লাস্টিকের মডেল ভাস্কর্যকে কাপড় পড়িয়ে রাখা হয়, সৌদি আরবে আগে মডেল ভাস্কর্যের মাথা থাকতোনা, এখন লাগানো শুরু হয়েছে।   

ভাস্কর্যের ব্যবহারিক প্রয়োগ কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী হলেও ভাস্কর্যের কমার্শিয়াল ও রাজনৈতিক ব্যবহার এখন সব দেশে সাধারণভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ ধর্ম নিরপেক্ষ দেশের দৃষ্টিকোনে ভাস্কর্য হচ্ছে শিল্পকর্ম- এটা জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, জাতীয় বীর, নেতা, শিল্পী, সাহিত্যিক, প্রাণী, মডেল যে কোনো বিষয়েই নির্মিত হতে পারে। ভাস্কর্যের আধুনিক বিশ্বে এই যদি হয় মূল্যায়ন, সেখানে আমাদের জাতির পিতার ভাস্কর্য জাতীয় জীবনে কতটুকু পজিটিভ রেজাল্ট আনবে তা ভেবে দেখা দরকার। 

ভারত গুজরাটে বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি - স্ট্যাচু অফ লিবার্টির প্রায় দ্বিগুণ 'স্ট্যাচু অফ ইউনিটি' বানিয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায়। স্থানীয় আদিবাসী ও কৃষকদের একটা অংশ বলছেন, ফসলের দাম নেই, চাষের জল নেই - অথচ বিপুল অর্থ খরচ করে মূর্তি বানানো হল। মি. মোদী বলেছেন, বহু মতভেদ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে সুষ্ঠু শাসন চালাতে হয়, সেটা সর্দার প্যাটেল সাহেব করে দেখিয়েছিলেন, তাই বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি বানিয়েছি"। উল্লেখ্য, এই মূর্তি বিষয়ে সব সংবাদ মাধ্যমে ভারতে এটিকে 'মূর্তি' আখ্যায়িত করেছে সব সময়ই, কেউ এটিকে ভাস্কর্য বলেনি। বাংলাদেশে ইসলামী দৃষ্টিকোন আর ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিকোনের কারণে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এইসব বিতর্ক হলেই সেটিকে স্বাধীনতার পক্ষে বিপক্ষে নিতে গেলে এই দেশটি শুরু করাই হবেনা, জাতি পঞ্চাশ বছর পরেও বিভক্ত থাকবে। 

সমাধান কি?

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কর্মকর্তারাই এর সমাধান দেবেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় চিন্তাকে গুরুত্ব দেবেন না কি ধর্মনিরপেক্ষ সিদ্ধান্তে তারা অটল থাকবেন। ধর্ম নিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের চেতনা অক্ষুন্ন রাখতে সরকার যদি মনে করে ভাস্কর্য স্থাপন করা দরকার, করে ফেলুন। কিন্তু ইনিয়ে বিনিয়ে এটি ইসলামে হালাল বলার দরকার নেই। 'কাবা শরীফ একটি ভাস্কর্য' বলেছেন একজন তেল হুজুর, এগুলি বলার দরকার নেই। ইসলামের ক্যাপসুল দিয়ে ঢাকার জন্যে বলার দরকার নেই যে, কোরআন ও হাদিসে মানুষের ভাস্কর্য তথা মূর্তি বানানোর বৈধতা আছে। এটি আল্লাহকে তোহমোদ দেয়া হবে। আল্লাহর কোরআন আর নবী (স)এর কথার অপব্যাখ্যা করা আর ধর্ম অবমাননা করা একই ব্যাপার, এই কবীরা গুনাহ আমরা কেউ না করি।  

ছবি: বরিশালের উজিরপুর উপজেলা অফিসের সামনে নির্মিতব্য মূর্তি অথবা ভাস্কর্য। কোনো সাইনবোর্ড নেই। এখন দেখতে ভালো লাগছেনা বলে কাজ শেষ করে বরং এগুলিকে সুন্দর বানিয়ে ফেলুন যার যার চেহারায় বানাতে চান, কোন সমস্যা নেই। আখেরাতের সমস্যা আখেরাতের সময় দেখা যাবে। সেদিন যার যার সমস্যা তাঁরই জবাব দিতে হবে বিচার দিনের মালিকের কাছে। রেফারেন্সের জন্যে লেখাটি বড় হলেও কিছু কোরআন ও হাদিসের কথা আলোচনা হলো। আল্লাহ নিশ্চয়ই এর খুশি করা প্রতিদান দেবেন।