বিএনপি দেশের বিদ্যমান সংবিধান সংস্কারে ‘একগুচ্ছ’ প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে, যা ৩১ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে তৈরি। দলের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব আগামী সোমবারের মধ্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশনে জমা দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন।
বিএনপির চূড়ান্ত প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, *দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন*, *নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃস্থাপন*, এবং *রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা*। দলের অভিযোগ, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানে বিভিন্ন সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা নিজেদের হাতে পাকাপোক্ত করে নিয়েছিল, যা তারা ভুল ধারণা বলে দাবি করছে। বিএনপির মতে, একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রয়োজন, যা জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচন কমিশন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের সংস্কারে বেশ কিছু নতুন প্রস্তাবও চূড়ান্ত করেছে। এর পাশাপাশি, দলটি আরও দুটি নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে, যাতে সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কার্যক্রমকে সহায়তা করা যায়।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। নতুন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রথম ৬টি কমিশন গঠন করে, এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনগুলোকে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এর পরবর্তী সময়ে আরও ৯টি কমিশন গঠন করা হবে।
বিএনপি তার ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবকে আগামীতে ক্ষমতায় গেলে তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল হিসেবে ব্যবহার করবে। তারা ঘোষণা করেছে, নির্বাচনে বিজয়ী হলে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে, যারা এই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে।
এছাড়া, বিএনপির গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিটি ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। এগুলোর মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিটির প্রধান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ তার প্রতিবেদন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছেন। এদিকে, নির্বাচন কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রতিবেদনও চূড়ান্ত হয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও প্রস্তাব সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত কমিশন এ বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করবে, তারপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে।
এদিকে, সম্প্রতি পাঁচ সদস্যের একটি নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠিত হয়েছে, যার প্রধান হিসেবে সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা নতুন কমিশন গঠনকে নির্বাচনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তবে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, তারা নতুন কমিশনের প্রতি আস্থা রাখতে চান, তবে কমিশনটির কার্যক্রম দেখতে চান, কথা নয়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।