নাম বিভ্রাটে মাদক মামলায় মাহবুবের জায়গায় মাহাবুল, আদালতের কাঠগড়ায় !

নিজস্ব প্রতিবেদক
আতিকুর রহমান, জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: শুক্রবার ২৯শে নভেম্বর ২০২৪ ০৩:২৯ অপরাহ্ন
নাম বিভ্রাটে মাদক মামলায় মাহবুবের জায়গায় মাহাবুল, আদালতের কাঠগড়ায় !

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় এক মারাত্মক ভুলের কারণে একজন নিরীহ দিনমজুর, মাহাবুল, মাদক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন। নামের সামান্য মিলের কারণে ২০১৮ সাল থেকে মিথ্যা মাদক মামলার আসামি হিসেবে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন মাহাবুল। অথচ, আসল মাদক ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন পুলিশের নেকড়ে ফাঁদে ধরা পড়েনি এবং দিনমজুর মাহাবুলের মতো একজন নিরপরাধ ব্যক্তি মামলার ঘানি টানতে বাধ্য হচ্ছেন।


এ ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মাইলবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামে, যেখানে মাহাবুলের নামের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী মাহবুবের নাম কিছুটা মিল থাকায় পুলিশ তাকে ভুলভাবে গ্রেফতার করে। ২০১৮ সালের ৯ নভেম্বর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ইশ্বরচন্দ্রপুর থেকে ১০০ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিলসহ শুকুর আলী নামে এক মাদক পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। এ ঘটনায়, বিজিবি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ, ভুলবশত, মাহাবুলের নাম উল্লেখ করে চার্জশিট দেয় এবং তাকে গ্রেফতার করে।


মাহাবুলের পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযোগ করা হয়েছিল যে, তারা পুলিশকে আসল মাদক ব্যবসায়ীর ব্যাপারে জানিয়েছে, কিন্তু তদন্তে তা গুরুত্ব পাওয়া হয়নি। গ্রামবাসীও জানান, মাহাবুল কখনো মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং তার নামের ভুল মিলের কারণে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে। গ্রামবাসী আজিজুর রহমান বলেন, "এটা শুধু নামের ভুল নয়, এ যেন একটা বড় ভুল সিদ্ধান্ত, যা এখনো সংশোধন হচ্ছে না।"


মাহাবুলের মা, তহমিনা খাতুন, জানান, "আমার ছেলে নিরাপরাধ। প্রতিহিংসা বা কিছু скрыন কারণে কেউ তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আমি রাষ্ট্রের কাছে দ্রুত বিচার চাই।" 


এদিকে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা থানার এসআই মেজবাহুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মহেশপুর থানার ওসি ফয়েজ আহম্মেদ এ বিষয়ে মন্তব্য করেন, "যেহেতু পিতার নাম ও অন্যান্য তথ্য মিলছে না, তাই গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম।"


এই ঘটনার পরে, ঝিনাইদহ জেলা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট এস এম মশিযূর রহমান জানান, "নাম বিভ্রাটের কারণে নিরীহ এক ব্যক্তি মিথ্যা মামলায় দোষী হতে পারে না। এটা একটি বড় ভুল, যা আদালত ও পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মনে ভুল বার্তা পাঠাচ্ছে।"


এ ঘটনায় শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে যে, এমন ভুল তদন্তে সমাজের সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হতে পারে। মাহাবুলের মতো নিরীহ একজন ব্যক্তি এখনও মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে তার আর্থিক ও সামাজিক জীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।