মৃত্যুর প্রথম রাত, এক অমোঘ বাস্তবতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: শুক্রবার ২৯শে নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
মৃত্যুর প্রথম রাত,  এক অমোঘ বাস্তবতা

মৃত্যু আমাদের সবার জন্য এক অবধারিত বাস্তবতা। আল কোরআনে আল্লাহ سبحانه وتعالى বলেছেন, *"প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে"*, যা থেকে আমাদের জন্য এটি স্পষ্ট যে, মৃত্যু কাউকেই ছাড়বে না। কিন্তু আমরা কি কখনো ভাবি, আমাদের মৃত্যুর পরের প্রথম রাতটা কেমন হতে পারে?


প্রথমেই আসুক মৃত্যুর পরের মুহূর্তের কথা। শব-জীবনের শেষ সময়ে আমাদের দেহটি বিশ্রাম নেয়, তবে সেই বিশ্রামের অবস্থা আরামদায়ক নয়। আমাদের প্রিয় বিছানা, ভালোবাসার ঘর, ঘরের পরিচিত পরিবেশ—সবই সেদিন ছেড়ে দিতে হবে। মৃত্যুর পর, দেহটি অন্য কোনো পরিচিত জায়গায় চলে যাবে। পরিচিত আত্মীয়স্বজনরা একে একে চলে আসবে, তবে তাদের চোখে আপনি আর "মানুষ" নন, আপনি তখন এক মৃতদেহ। যেভাবে দেহটি কাফনে মুড়ে, জানাজা শেষে কবরস্থানে রাখা হয়, সেখানেই শুরু হয় আপনার নতুন পথচলা—যেখানে আপনাকে একা থাকতে হবে, একা কষ্ট সহ্য করতে হবে, একা আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। 


মৃত্যুর পর প্রথম রাতের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমাদের আত্মা যখন কবরের মধ্যে একা, অন্ধকারে থাকবে, তখন ফেরেশতারা এসে আমাদের পরীক্ষা করবে। এই পরীক্ষা কেমন হবে? প্রকৃতপক্ষে, যখন আমরা দুনিয়াতে নানা কাজ করি, আমাদের আত্মা সেই কাজের ফলস্বরূপ মৃত্যুর পরকারা পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। কোনো দান-খয়রাত, ভালো কাজ বা তওবা কি আমাদের জন্য আল্লাহর রহমতের মাধ্যম হবে? আমরা কি আল্লাহর দিক থেকে আশীর্বাদ পেতে সক্ষম হবো?


কবরের প্রথম রাত, মৃত্যুর পর সেই একাকী মুহূর্ত, যখন আমাদের সঙ্গে কেউ থাকবে না—শুধু আমরা, আমাদের আমল এবং ফেরেশতারা। রাসুল (সা.) বলেছেন, *"বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরের জন্য কাজ করে"* (তিরমিজি)। সত্যিই, মৃত্যুর পর যে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে, তা ভাবতে হলে আজকের এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে আমরা কীভাবে সময় কাটাচ্ছি, আমাদের কাজগুলো কি আমাদের আত্মার জন্য সঠিক হচ্ছে?


এখন, আমরা যখন এই প্রশ্নগুলো করি, তখনই কিন্তু একটি উপলব্ধি আসে—আমরা যদি মৃত্যুর পরের জন্য প্রস্তুত না হই, তাহলে কবরের প্রথম রাত হবে আমাদের জন্য এক অসহনীয় অভিজ্ঞতা। কিন্তু যদি আমাদের জীবন সঠিক পথে পরিচালিত হয়, যদি আমাদের কাজগুলো সদা আল্লাহর নির্দেশনায় থাকে, তাহলে এই কবরের রাতটা আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত ও শান্তির হতে পারে।


প্রিয় পাঠক, আসুন আমরা নিজেদের জীবনকে শুধরাই, আল্লাহর পথে চলার চেষ্টা করি এবং নিশ্চিত করি যে আমাদের পরবর্তী জীবন যেন শান্তির এবং মঙ্গলময় হয়।