পালালেন সেই মন্ত্র পড়ে মাইকে 'ফুঁ' দেয়া কবিরাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ১১ই নভেম্বর ২০১৯ ১০:৪৩ অপরাহ্ন
পালালেন সেই মন্ত্র পড়ে মাইকে 'ফুঁ' দেয়া কবিরাজ

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় হাজার হাজার মানুষকে মাঠে জড়ো করে জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মাইকে ফুঁ দিয়ে কবিরাজের পানি পড়া ও তেল পড়া দেয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ আর নিন্দার ঝড় বইছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সোমবার (১১ নভেম্বর) জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ঘটনার দিন কবিরাজ সবুজ মিয়ার সঙ্গে মাঠে উপস্থিত থাকা পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু আজকের সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এরই মধ্যে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান কাঠুরিয়া কবিরাজ সবুজ মিয়া।

এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী। ঘটনার পর জেলার আর কোথাও যেন এমন ঘটনা না ঘটে সেটি দেখার জন্য সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন ডিসি।

স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রেণু বলেন, কিছু ভক্তের অনুরোধে ওই দিন সেখানে কাঠুরিয়া কবিরাজ উপস্থিত হয়েছেন। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সেখানে যাই আমি। অনেক মানুষের সমাগম দেখে কবিরাজকে দ্রুত ফুঁ দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কাঠুরিয়া কবিরাজের ঝাড়ফুঁকের পানি খেলে এবং তেল মালিশ করলে সব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং মনোবাসনা পূরণ হবে- এমন অন্ধ বিশ্বাস থেকে শনিবার (০৯ নভেম্বর) পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের চরপলাশ গ্রামের একটি মাঠে উপস্থিত হন হাজার হাজার নারী-পুরুষ।

তাদের অনেক অপেক্ষার পর বেলা ১১টার দিকে কাঠুরিয়া কবিরাজের আগমন বার্তা মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। তার সঙ্গে আসেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও সুখিয়া ইউপি পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ টিটু। মঞ্চে উঠে কাঠুরিয়া কবিরাজ উপস্থিত লোকজনকে ধৈর্য ধরে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। কিছুক্ষণ পর সমাগত নারী-পুরুষদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি মাইকে ফুঁ দেব। মাইকে আমার ফুঁয়ের আওয়াজ যে পর্যন্ত যাবে সে পর্যন্ত তেল-পানির বোতল কাজ করবে। কেউ ধৈর্য হারাবেন না।’

এমন ঘোষণার পর চারপাশে অবস্থান করা হাজার হাজার নারী-পুরুষ তেল-পানির বোতল উঁচিয়ে ধরলেন, বক্তব্য শেষ হতে না হতেই কাঠুরিয়া কবিরাজ মাইকে ফুঁ দেন। রোগবালাই দূর এবং মনোবাসনা পূরণের আনন্দ নিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরলেন সবাই।

মাঠে হাজার হাজার মানুষকে জড়ো করে মাইকে ফুঁ দিয়ে সব রোগের চিকিৎসার পানি পড়া দেয়ার ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত হয়। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে পানি পড়া দেয়ার ওই দিনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। জানা যায়, সবুজ মিয়া নামের ওই কবিরাজের বাড়ি ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউপির পায়লাবের গ্রামে। তিনি বনে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন। সপ্তাহে চারদিন কাঠ কাটেন এবং তিনদিন কবিরাজি করেন।

পাকুন্দিয়া থানা পুলিশের ওসি মো. মফিজুর রহমান বলেন, প্রথমে আমরা বিষয়টি জানতাম না। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি হাজার হাজার মানুষ। এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আয়োজন শেষ করতে বলা হয়। আমাদের নির্দেশের পর মাইকে ফুঁ দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে যান কবিরাজ।

পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এসব তন্ত্রমন্ত্র বিশ্বাস করি না। হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন এ খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। তখন দ্রুত ফুঁ শেষ করে কবিরাজকে চলে যেতে বলি। তবে এখন বুঝতে পারছি আমার সেখানে যাওয়া ঠিক হয়নি।’

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, এটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে এমন ঘটনা লজ্জার। সোমবার জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ঘটনায় কারা জড়িত, কাদের মদদে কবিরাজ হাজার হাজার মানুষকে জড়ো করে মাইকে ফুঁ দিয়ে ভণ্ডামি করলেন- তা বের করার জন্য পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর যেন কোথাও এমন ঘটনা না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব