কুড়িগ্রামে এক মালি দুই ফুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
শামসুজ্জোহা সুজন , উপজেলা প্রতিনিধি, (ভূরুঙ্গামারী) কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: শনিবার ৩১শে জুলাই ২০২১ ০৭:৪১ অপরাহ্ন
কুড়িগ্রামে এক মালি দুই ফুল

ব্যাংক কর্মকর্তা এক স্বামীকে নিয়ে দুই স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের উত্তর ভরতের ছড়া গ্রামে। 



স্থানীয়রা জানান, উত্তর ভরতের গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে জনতা ব্যাংক ভূরুঙ্গামারী শাখার কর্মকর্তা (ক্যাশ) ছানোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের আব্বাস আলীর মেয়ে আশানুল আঁখিকে বিয়ে করে বাড়িতে আনেন। 



শুক্রবার বিকালে ছানোয়ার স্ত্রী আঁখি সহ শ্বশুর বাড়ি ভূরুঙ্গামারী যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের খামার আন্ধারীঝাড় এলাকার আয়নাল হকের মেয়ে আইরিন ছানোয়ারের প্রথম স্ত্রী দাবি করে তার বাড়িতে আসেন। 



তখন ছানোয়ারের পরিবার ও আঁখির আত্মীয় স্বজনের সাথে আইরিনের সাথে আসা তাঁর বাবা ও আত্মীয়স্বজনের বাকবিতন্ডা শুরু হয়। তখন ছানোয়ারকে নিয়ে দুই স্ত্রী টানাহেচরা শুরু করে। আঁখির আত্মীয় স্বজন ছানোয়ারকে টেনে মাইক্রোবাসে তুলতে চায় অপরদিকে আইরিনের আত্মীয় স্বজনরা টেনে নামায়। 




এক পর্যায় বিষয়টি হাতাহাতিতে গড়ায়। এলাকাবাসী উভয় পক্ষকে শান্ত করে বিষয়টি স্থানীয় ভাবে সমাধানে উদ্যোগ নেন। এসময় আঁখির পক্ষ নিয়ে ভূরুঙ্গামারী ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ১০/১২ জন নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হয়ে একটি মাইক্রোবাসে ছানোয়ার এবং আঁখিকে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ভূরুঙ্গামারী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। 



আইরিন জানান, ছানোয়ারের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ২৩ জুলাই নাগেশ্বরীতে তার মামার বাড়িতে ছানোয়ারের পরিবারের সম্মতিতে রেজিস্ট্রি করে তাদের বিয়ে হয়। এরপর ছানোয়ারসহ ওই বাড়িতে দুইদিন থাকেন তারা। শুক্রবার পারিবারিকভাবে তাকে ছানোয়ারের বাড়িতে আনার কথা ছিল। সে মোতাবেক বাড়িতে আয়োজন চলছিল। 




বরযাত্রী আসার দেরি দেখে ছানোয়ারকে ফোন দেয়া হচ্ছিল কিন্তু সে ফোন ধরেনি। পরে খবর পাই সে ভূরুঙ্গামরীতে বিয়ে করেছে। এসে দেখি সে বউ নিয়ে শ্বশুরবাড়ী যাচ্ছে। ছানোয়ারের বিয়ে করা প্রথম স্ত্রী হিসেবে এখন তার বাড়িতে অবস্থান করছি। 



আঁখি জানান, চলতি বছরের মার্চে পারিবারিকভাবে ছানোয়ারের সাথে বিয়ে হয়। বিশেষ কারণ বিয়ের বিষয়টি সবাইকে জানানো হয়নি। গত বৃহস্পতিবার ২৯ জুলাই রাতে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শ্বশুর বাড়িতে আসি। আমিই ছানোয়ারের প্রথম স্ত্রী। ওরা (আইরিন) ছানোয়ারকে তাদের বাড়িতে চায়ের দাওয়াত দিয়ে ডেকে নিয়ে জোর করে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করিয়েছে। 




এবিষয়ে ছানোয়ার ফোনে কোন মন্তব্য করতে চায়নি। তবে সাক্ষাতে কথা বলতে চেয়েছেন। 



সাবেক উপজেলা চেয়াম্যান আব্দুল হাই মাষ্টার জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে একই ব্যক্তির দুই বিয়ে করার ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পর্যায় বসার কথা ছিলো। তবে ছাত্রলীগের ছেলেরা পক্ষ নিয়ে ছানোয়ারসহ আঁখিকে নিয়ে যায়। 




ভূরুঙ্গামারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন সরকার জানান, আমরা কয়েকজন গিয়ে ছানোয়ার ও আঁখিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। সেখানে কোন অপ্রিতকর ঘটনা ঘটেনি। আমার জানামতে একবছর আগে ছানোয়ারের সাথে আঁখির বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়েছে। 




ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, স্ত্রীর দাবী করা দুইজনই ব্যাংক কর্মকর্তা ছানোয়ারের বৈধ স্ত্রী। তিনি একজনকে চলতি বছরের মার্চে এবং অপরজনকে জুলাই মাসে বিয়ে করেছেন। কোনপক্ষই এ বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ করেননি।