"আমরা নিজেরা ঠিকমতো খাইতে পারি না,, আর বোবা গাই-বাছুর গুলানরে তো আর ক্ষিধায় কষ্ট দিবার পারি না। তাই শত কষ্ট অইলেও ওগেরে জন্যি পদ্মা-যমুনা পাড়ি দিয়া দুর্গম চরে যাই ঘাস আনতে "।
গরুর খাদ্য সংকটে নিজের পোষা ৩ টি গরু ও ৪ টি ছাগলের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে কাঁচাঘাস সংগ্রহের কথা বলছিলেন ৫২ বছর বয়সী নারী রাহেলা বেগম।
তার বাড়ী রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী বাহিরচর সাত্তার মেম্বারের পাড়ায়।
জানা গেছে , গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার শতশত সাধারণ মানুষ প্রায় সারা বছরই গরুর খাদ্য সংকটে থাকেন।এদের প্রায় সবাই নদী ভাঙ্গনের শিকার ভূমিহীন অসহায় কৃষক। নিজেদের জমি না থাকায় তারা পশু পালনে কাঁচা ঘাসের তীব্র সংকটে থাকেন।
কিন্তু এ সময়টায় বিস্তীর্ণ দূর্গম চরাঞ্চলে প্রচুর ঘাস জন্মে।সেই ঘাস সংগ্রহে প্রতিদিন দল বেঁধে নারী-পুরুষেরা ইন্জিনচালিত ট্রলারযোগে সেই চরে যান।এতে তাদেরকে উত্তাল পদ্মা-যমুনা নদী পাড়ি দিতে হয়।
সরেজমিন মঙ্গলবার (৮ জুন) দুপুরে দৌলতদিয়া ২নং ফেরিঘাটে কথা হয় কৃষক ওসমান খানের (৫০) সাথে।তিনি বলেন,তার ৩ টি গাভী, ১ টি ষাড় ও ৪ টি ছাগল আছে।আমার সহায় - সম্পদ বলতে এগুলোই।নিজের কোন জমিজমা নাই।
সব নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। গরু ছাগল গুলোর প্রচুর খাবার লাগে।খড়,কুড়া,ভুষি এগুলোর অনেক দাম।শুষ্ক মৌসুম খুব কস্টে কিনে-কেটে খাওয়াই।কিন্তু এখন থেকে পুরো বর্ষা মৌসুম চর থেকে ঘাস কেটে এনে খাওয়াব।
তার মতো নুরজাহান বেগম (৪৫),রুস্তম কাজী (৪৮),আব্দুল বেপারী (৬০)সহ অন্তত ২৫/৩০ নারী- পুরুষ ইন্জিনচালিত ট্রলার থেকে তাদের নিজ নিজ ঘাস নামাচ্ছিলেন।
তারা বলেন,সকালে পানি-পান্তা খেয়ে যাই। আবার কত দিন না খেয়েও যাই। কতদিন সাথে করে কিছু নিয়ে যাই দুপুরে খাওয়ার জন্য। সারাদিন চরে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ঘাস কাঁটি।বিকেলে ঘাটে এসে নামি।এতে খুব কষ্ট হলেও বোবা প্রানীগুলোর আহার জোগাতে এ ছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই।
ট্রলার চালক সেকেন্দার মাঝি জানান,তার মতো আরো বেশ কয়েকটি ট্রলারে প্রতিদিন বহু নারী -পুরুষ দূর্গম চর বিশ্বনাথপুর,ভাবৈল, বনভাবৈল,চর পালন্দ,আখ পালন্দসহ বিভিন্ন চরে গিয়ে ঘাস নিয়ে আসেন।তিনি জনপ্রতি ৪০ টাকা করে ভাড়া নেন।চরে প্রচুর পরিমানে কড়চা,বন,দুবলা,বাকশী জাতীয় ঘাস পাওয়া যায়।
যে কারনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত চরগুলোতে ছুটে যায়। যাওয়ার সময় তেমন ঝুঁকি না থাকলেও ফেরার সময় অতিরিক্ত লোড থাকলে কিছুটা ঝুঁকি থাকে বলে তিনি জানান।ভরা বর্ষার সময় তীব্র স্রোত ও বড় বড় ঢেওয়ের কারনে এ ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।
কোন প্রতিকূলতাই অসহায় এ মানুষগুলোর জীবন সংগ্রামে বাঁধা হতে পারে না।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।